সোমবার সারাদিন রাজধানীর সচিবালয়ে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ নিয়ে ছিল উত্তেজনা। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রত্যাহারের দাবিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় কর্মচারীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। শুধু সোমবার নয়, আন্দোলন চলবে মঙ্গলবারও—এমন ঘোষণা দিয়েছেন কর্মচারীরা।
গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ সংশোধন করে এই অধ্যাদেশ অনুমোদন করে এবং রোববার তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। গেজেট প্রকাশের পর থেকেই সচিবালয় চত্বরে শুরু হয় আন্দোলন। জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধেও শ্লোগান দিতে দেখা গেছে বিক্ষুব্ধ কর্মচারীদের।
অধ্যাদেশে চার ধরনের অপরাধকে চিহ্নিত করে তিন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে: বরখাস্ত, অপসারণ এবং বেতন ও পদের গ্রেড কমানো। অপরাধের মধ্যে রয়েছে—কাজে অনানুগত্য, একক বা সমবেতভাবে অনুপস্থিতি, উস্কানি দেওয়া ও কাজে বাধা দেওয়া।
এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী অভিযোগ উঠলে সাত দিনের মধ্যে ‘কারণ দর্শাও নোটিশ’ দেওয়া হবে এবং দোষী প্রমাণিত হলে এক বা একাধিক শাস্তি কার্যকর হবে। তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ নেই, যদিও পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যাবে।
কর্মচারীদের আশঙ্কা: অধিকার হরণ ও মত প্রকাশে বাধা
বিক্ষুব্ধ কর্মচারীদের দাবি, এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে কর্মস্থলে যেকোনো অন্যায় আদেশ মেনে নিতে তারা বাধ্য হবেন। ভিন্নমত পোষণ করলে বরখাস্তের মতো কঠোর শাস্তির আশঙ্কায় থাকবেন। তাদের মতে, এটি গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর বলেন, “এটি কার্যকর হলে কর্মকর্তা যা বলবেন, কর্মচারীরা তা মানতে বাধ্য হবেন। না মানলে চাকরি যাবে। এটি অসম্মানজনক আচরণকে উৎসাহ দেবে।”
সরকারের ব্যাখ্যা এবং বিতর্ক
সরকারি দিক থেকে এখনো এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা আসেনি। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দাবি করেছেন, “এই আইন আসলে আগের আইনের রূপেই ফিরে যাওয়া। আওয়ামী লীগ সরকার যা পরিবর্তন করেছিল, সেটাই বাদ দেওয়া হয়েছে।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, “দাবি আদায়ের বিষয়ে কিছু বাজে নজির তৈরি হয়ে গেছে। কেউ অযাচিত পন্থা করলে সরকারের উচিত আলোচনা করে সেটার সমাধান করা যাতে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির স্বীকার না হতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, এই অধ্যাদেশ নতুন কিছু নয়—বিদ্যমান আইনে এ ধরনের বিধান আগেই ছিল। সরকারের উচিত আলোচনার মাধ্যমে একটি সহনীয় সমাধানে পৌঁছানো, যাতে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে না পড়ে।
প্রাক্তন কর্মকর্তারাও তুলেছেন প্রশ্ন
সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, “শুধু কর্মচারীদের জন্য আলাদা আইন করা গণতন্ত্রের সঙ্গে যায় না।” অপরদিকে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, “আইনে যেন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও মনে করেন, অনেক কর্মচারী আন্দোলনে যোগ দেন নেতাদের চাপে। তাই সংগঠনগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।

>>বিস্তারিত অধ্যাদেশ গেজেট দেখুন <<
>>বিস্তারিত অধ্যাদেশ সংবাদ দেখুন <<
আন্দোলন চলবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত
এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলন দমাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন—অধ্যাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই অবস্থান সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
দেখুন- সাপ্তাহিক চাকরির খবর বা নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল